Time is money

Sunday, November 29, 2015

গোপন রোগের কঠিন ঔষধ, বিফলে মূল্য ফেরত! z5

আপনি কি দাম্পত্য জীবনে অসুখি? অথবা বিয়ে করতে ভয় পাচ্ছেন।আজই সেবন করুন কস্তুরী যুক্ত শাহী মদক।সেবনের সাথে সাথে রেজাল্ট। প্রতি কোর্স মাত্র ১৫৫০/- টাকা।

পুরুষত্বের প্রতীক ট্রাইগন পাওয়ার ম্যাসেজ ওয়েল।প্রাকৃতিক নির্যাস থেকে অত্যাধুনিক ফর্মুলায় তৈরী।প্রতি ফাইল মাত্র ৮০০/- টাকা। এক ফাইলের অধিক লাগে না।

চিকন ও দুর্বল স্বাস্থ্য নিয়ে ভাবছেন? আর ভাবনা নয়, মাত্র ১৫ দিনে কোন পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া ছাড়াই পাহাড়ী গাছ গাছড়ার তৈরি ভেষজ ঔষধ সেবন করে স্থায়ী ভাবে মোটা ও ভরাট চেহারার অধিকারী হউন। প্রতি কোর্স মাত্র ১২০০/- টাকা।

আপনি কি লম্বা হতে চান? চায়নার সম্পূর্ণ নতুন আবিষ্কারে ২ থেকে ৩ ইঞ্চি লম্বা হউন। প্রতি কোর্স মাত্র ২০০০/- টাকা।

হাঁপানী ও শ্বাসকষ্টে ভুগছেন? কোন ঔষধে ফল পাচ্ছেন না? সেবনের সাথে ফলাফল। প্রতি কোর্স মাত্র ১৫০০/- টাকা।

আপনার মেদ ও ওজন অতিরিক্ত হারে বেড়ে গেছে? দেশী বিদেশী ভেষজের নির্যাস দ্বারা তৈরী স্লীম টনিক সেবন করে ৮ থেকে ১০ কেজি মেদ ও ওজন কমান।ব্যায়াম ও ডায়েট কন্ট্রোলের কোন প্র্যোজন নেই।কোর্স মাত্র ১৫০০/- টাকা। এক ফাইলের বেশি প্রয়োজন নাই।

বিনা অপারেশনে নাকের পলিপাস সহ অর্শ্ব গেজ, পাইলস নির্মূল করুন। নতুন ও পুরাতন আমাশয় ও বাত ব্যাথা স্বল্প সময়ে প্রতিকার করা হয়।

যে সমস্ত মা ও বোনেরা জটিল ও কঠিন গোপন সমস্যায় ভুগছেন তাদের জন্য দ্রুত চিকিৎসা দেয়া হয়।ও মুখের কালো দাগ, ব্রন ও মেছতা সহ ত্বক পরিচর্যার জন্য যাদুকরী ক্রীম ও লোশন পাওয়া যায়।

আপনি কি? HBS(Ag)পজেটিভ বা জন্ডিসে আক্রান্ত হয়ে বিদেশ যেতে পারছেন না।এই ভয়ংকর রোগ মুক্তির জন্য আজই চলে আসুন।



ইন্ডিয়া হারবাল, মালিবাগ রেল গেইট সংলগ্ন ডি,আই,টি রোড, মালিবাগ, ঢাকা।
মহাখালী অফিস-এইচ ৭০ সেতু ভবনের সামনে, ফ্লাই ওভারের গোড়ায়, আমতলী, মহাখালী, ঢাকা।
যে কোন স্থান থেকে ভিপি তে ঔষধ পেতে ফোন করুন ----------

একটা সিনেমা দেখার শুরুতে, মাঝে এবং শেষে যদি ৩ থেকে ৪ বার ইনিয়ে বিনিয়ে এই তথ্য দেয়া হয় তখন স্বাভাবিক ভাবেই বুঝে নিতে হবে এই তথ্যগুলো অতি জরুরি। হারবাল চিকিৎসকগন আপনাকে নিয়ে যারপর নাই চিন্তিত। সমাজ সেবা তো এভাবেই করতে হয়, তাই না?

আমার খটকা লাগলো অন্য জায়গায়, চিকিৎসকের দুরদৃষ্টি তো মাশ আল্লাহ সেই রকম। আপনার সমস্যা জানার আগেই বলে দিচ্ছে এক ফাইলের বেশি লাগবে না। ঔষধেরও সেই গুন, এক ফাইলে রোগ সেরে না গেলে ইহ জগতে আর কোনো আশা নাই। তখন আল্লাহ’র ওয়াস্তে নিজেকে সপে দিতে হবে।

তাহলে কারা এই দুরদৃষ্টি সম্পন্ন চিকিৎসক? আর গৌরাবান্বিত এই সব ঔষধের উপাদান-ই বা কি কি?

হারবাল চিকিৎসক হাকিম গোলাম ফারুক হাওলাদার। টেবিলের পাশে সাজানো ডজন খানেক ‘শ্রেষ্ঠ চিকিৎসকের’ ট্রফি।চিকিৎসালয়ের চিকিৎসাসেবার ন্যূনতম অনুমোদন ও সরঞ্জাম নেই। গোলাম ফারুকসহ কারোরই চিকিৎসাসেবা দেওয়ার ন্যূনতম শিক্ষাগত যোগ্যতা ও অনুমোদন নেই। অথচ তাঁরা সব ‘কঠিন ও জটিল’ রোগের চিকিৎসা করে যাচ্ছেন। 

গোলাম ফারুক চিকিৎস প্রক্রিয়া সম্পর্কে তিনি বলেন, তাঁর কাছে কোনো পুরুষ রোগী এলে প্রথমেই তিনি রোগীর প্রস্রাব পরীক্ষা করতে বলেন। কিন্তু তাঁর ওখানে প্রস্রাব পরীক্ষার কোনো উপকরণ নেই। শুধু কয়েকটি টেস্টটিউব রয়েছে। রোগীর সামনে তাঁর প্রস্রাব একটি টেস্টটিউবে ঢালা হয়। তাঁর সামনেই কয়েক ফোঁটা তারপিন তেল ও ফিটকারি ঢালা হয় টেস্টটিউবে। কিছুক্ষণ পরই টেস্টটিউবের ওপর একটা সাদা স্তর তৈরি হয়। তখন কথিত চিকিৎসক রোগীকে শঙ্কিত হয়ে বলেন, তাঁর (রোগীর) প্রস্রাবের সঙ্গে বীর্যপাত হচ্ছে। তাঁর যৌবন হুমকির মুখে, জীবনের সুখ-স্বাচ্ছন্দ্য সব শেষ, টাকাপয়সার আর কোনো দামই থাকল না ইত্যাদি ইত্যাদি। রোগীকে ভড়কে দেওয়ার জন্য আরও বলা হয়, সাধারণ অ্যালোপ্যাথিক চিকিৎসায় এর নিরাময় সম্ভব নয়। একমাত্র সমাধান ভেষজ চিকিৎসা, তবে চিকিৎসাপদ্ধতি অনেক জটিল। মৃগনাভী, কস্তুরী, জাফরান, মাঝবিলের পদ্মের রেণু ইত্যাদি লাগবে। এসবের জন্য অনেক টাকা লাগবে। রোগী তখন উপায়ান্তর না পেয়ে টাকা দিতে রাজি হন। প্রতিষ্ঠানটির টাকা আদায়ের খাতা উল্টে দেখা গেছে, সর্বনিম্ন তিন হাজার থেকে ৭৫ হাজার টাকা পর্যন্ত রোগীদের কাছ থেকে আদায় করা হয়েছে। এ রকম প্রতারণার মাধ্যমে ছয়-সাত বছরের মধ্যেই কোটিপতি হয়েছেন গোলাম ফারুক।

মূলত বাজারে প্রচলিত বিভিন্ন ধরনের অ্যালোপ্যাথিক ওষুধের গুঁড়া মিশিয়ে কথিত মহৌষধ তৈরি করা হয়। যেমন, বাতনাশক ওষুধ হিসেবে ডাইক্লোফেনাক-জাতীয় ব্যথানাশক, অ্যালার্জির জন্য অ্যালাট্রল, মোটা হওয়ার জন্য স্টেরওয়েড হরমোন আর যৌন রোগের মহৌষধ হিসেবে সিনেগ্রা-জাতীয় ট্যাবলেটের গুঁড়া মেশানো ‘গুলি’, ‘হালুয়া’ তৈরি করা হয়। এ রকম ওষুধ ১০ থেকে ১২ হাজার টাকা প্রতি ফাইল বিক্রি করা হয়।

প্রতিষ্ঠানের প্রচারণার জন্য বিভিন্ন পত্রিকা, টিভি চ্যানেল ও কেব্ল লাইনে বিজ্ঞাপন দেওয়া হয়। আর শহরময় পোস্টার ছড়িয়ে দেওয়ার জন্যও আলাদা লোক রয়েছে। জানতে চাইলে ফারুক বলেন, প্রচারণার জন্য বিভিন্ন ভুঁইফোড় সংস্থাকে বিজ্ঞাপন দেন তিনি। আর ওই সংস্থাগুলো বিভিন্ন অনুষ্ঠান আয়োজন করে গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি ও মন্ত্রীদের সঙ্গে ছবি তোলার সুযোগ করে দেয়। (তথ্যসূ্ত্র- দৈনিক প্রথম আলো)

শুধু রাজধানী ঢাকাতেই নয়, ইন্ডিয়া হারবাল পৌঁছে গেছে দেশের আনাচে কানাচে। সম্প্রতি সেন্টমার্টিন ট্যু’রেও এর বিজ্ঞাপন আমার নজর কাড়ে। নারকেল গাছে টিনের ১৬*১২ ইঞ্চি লাল রং এর বোর্ডে বিভিন্ন তথ্য লেখা। ভাবখানা এমন যেন “বাদ যাবেনা কেউ”।

আইন-শৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনী মাঝে মধ্যে এই ধরনের প্রতিষ্ঠান গুলো তে মোবাইল কোর্ট নিয়ে তল্লাশী করে সিলগালা, জেল জরিমানা করলেও আবার যেই কি সেই। ক্রেতা যতদিন আছে, বিক্রেতাও নানা মোড়কে ফিরে ফিরে আসবেই। এদের প্রতারনার এত চটকদার পন্থা রয়েছে যে, সচেতনতা ছাড়া সেগুলো বোঝা সম্ভব নয়।

আসুন সচেতন হই, সুস্থ থাকি :) :) 

No comments: