নন্দলালতো একদা একটা করিলো ভিষণ পণ,
যা করে হোক দেশের তরে রাখিবে সে জীবন।
অথবা
করিতে পারিনা কাজ, সদা ভয় সদা লাজ
সন্ধেহে সংকল্প টলে, পাছে লোকে কিছু বলে।
যে জেলে উত্তাল সাগরে ঢেউয়ের সাথে যুদ্ধ করে মাছ শিকার করে সেও শিকারী আবার যে শিকারী হেমন্তের পড়ন্ত বিকেলে সান্ত পুকুরে ছিপ দিয়ে মাছ শিকার করে তিনিও শিকারী। দু'জন মাছ শিকারী হলেও তাদের মাঝে যে কত যোজন ব্যবধান তা অতি সহজেই অনুমেয়। দুজনের সাহস ও মনো্বলে আকাশ পাতাল পার্থক্য। আমাদের সমাজে এমন ধারার অনেক মানুষ আছেন যার নিজেকে বড় একটা কিছু মনে করলেও যখন সমস্যা দেখা দেয় তখন পাশ কাটিয়ে নিজের গা বাচিয়ে চলতো পছন্দ করেন। তারা ঝড়ো হাওয়ায় নদীতে নৌকার পাল তুলতে সাহস করেন না। তারা সর্বদা সান্ত ও নীরব নদীর মাঝি সাজতে পছন্দ করেন। চলার পথে অন্যায় বা অসংগতি দেখলে তা এড়িয়ে চলতে চান। অথচ মুখে বড় বড় বুলি কপচান। এইটা করা উচিত এমন করা ঠিক হয়নি, এমন করলে ভালো হতো এই সব নীতি কথা তার অন্তরেই থেকে যায়। প্রকাশ করার সাহস করেন না।
কারণ প্রকাশ হলে যদি "পাছে লোকে কিছু বলে" তাই তারা সর্বদা সেই দলে থাকে যে দল ভারী দেখেন। সমাজের এই নন্দলালরা মানুষের যেমন কোন উপকারে আসেনা তেমনি অপকার করার ক্ষমতাও রাখেনা। মাকাল ফলের মতো এরা ক্ষনিক সময়ের জন্য শুধু সমাজের শোভা বর্ধনের যোগানদাতা। জবা ফুলের মতো, দেখতে সুন্দর হলেও গন্ধ নাই বলে সামাদর করেনা কেউ। নীরব কবি ও নীরব প্রেমের কোন মূল্য এই ধরাধামে নাই। কবি যদি তার কাব্যকে খাতায় লিপিবদ্ধ না করেন, আর প্রেমিক যদি তার মনের কথা তার প্রেমিকাকে না বলেন তা হলে হিসেবের খাতা শূণ্যই রয়ে যাবে। সকল আশা সূদুরে বিলীন হবে। তবে কিছু কিছু সময়ে এই সকল নন্দলালরা ভিষণ বিপজ্জনক হয়ে ওঠে, কারণ তাদের চিন্তা, চেতনা প্রকাশের ও প্রতিবাদের সাহস নাই বলেই কিছু ন্যায় অন্যায় পার্থক্য করার চেয়ে দলভারীদের অন্ধ সমর্থনে আগ্রহী হয়ে ওঠে। আর এই দলভারীদের কারণে কিছু নীতিবান ও প্রতিবাদী মানুষ কোন ঠাসা হয়ে পড়ে। আর এমন দেখতে দেখতে মানুষ একসময় নিজেকে গুটিয়ে নেয় যার কারণে অন্যায়ের প্রতিবাদ কিংবা অসংগতি ও ভুলে ভরা সমাজের শুদ্ধিলাভ হয়না।
প্রতিবাদি মানুষগুলো অশুভ ও নির্বোধ মানুষের পেশি শক্তির কাছে মার খেয়ে নিজেকে উট পাখির পর্যায়ে নিয়ে যায়। সে তখন প্রতিবাদ করার সাহস হারিয়ে ফেলে, বিপদের গন্ধ পেলে মাথা নিচু করে পাশ কাটিয়ে চলতে বাধ্য হয়। এটা কী কোন সভ্য সমাজে এবং সভ্য মানুষের কাম্য হতে পারে? আমরা চাই বা না চাই, পছন্দ করি আর নাই করি সমাজে বোধ শক্তি বিবর্জিত এই মানুষগুলো সমস্যা কিংবা অন্যায় দেখলে কোন প্রতিবাদ করা থেকে বিরত থাকে, নিজেকে আড়াল করে। প্রতিবাদের ভাষা হারিয়ে ফেলে সমাজের জঞ্জাল হয়ে ঘরের কোনেই নিজেকে আড়াল করতে পছন্দ করে। তাই নির্ঝাঞ্ছাট জীবন যাপন করতে উটপাখির মতো সব কিছু পাশ কাটিয়ে এবং সমস্যা থেকে অন্ততঃ একশত হাত দূরে থাকুন আর আজীবন বেঁচে থাকুন নন্দলাল হয়ে। আর তখন সকলে বলিবে ভ্যালারে নন্দ বেঁচে থাক চির কাল।
No comments:
Post a Comment